শিল্পনীতি বলতে কি বুঝ | শিল্পনীতির কৌশল

শিল্পনীতি কি?

শিল্পনীতি একটি দেশের শিল্পায়ন প্রক্রিয়ার দিক নির্দেশনা প্রদান করে থাকে৷ শিল্পায়নের গতিকে অব্যাহত জন্য সরকার অবস্থার আলোকে প্রয়োজনের প্রেক্ষিতে শিল্পনীতি ঘোষণা করে এবং সময়ের ব্যবধানে এর সংশোধন ও পরিবর্তন করে থাকে৷ 
শিল্পনীতি
শিল্পনীতি

শিল্পনীতি কি কি?

একটি সুষ্ঠু শিল্পনীতি শিল্পোদ্যোক্তাদেরকে শিল্প স্থাপনে এগিয়ে আসার জন্য আকৃষ্ট ও উদ্বুদ্ধকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে৷

শিল্প স্থাপনে সরকারি উৎসাহ দান

দ্রুত শিল্পায়নের লক্ষ্যকে বাস্তবায়নের জন্য সরকার শিল্পনীতিতে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে শিল্পোদ্যোক্তাদেরকে উৎসাহিত করে৷ এক্ষেত্রে সরকার সাধারণত যেসব সুযোগ সুবিধা দিয়ে থাকে তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য সুবিধাদি নিম্নে তুলে ধরা হলঃ সরকারি শিল্পনীতি অনুযায়ী সুষম বিকাশের জন্য সমগ্র দেশকে তিনটি শ্রেণিতে বিভক্ত করা হয়েছেঃ
  • উন্নত এলাকা
  • স্বল্পোন্নত এলাকা
  • অনুন্নত এলাকা
  • রাজস্ব সুবিধা

উন্নত এলাকা

যেখানে পর্যাপ্ত অবকাঠামোগত সুযোগ সুবিধা বিদ্যমান রয়েছে এবং যথেষ্ট শিল্পায়ন ঘটেছে৷

স্বল্পোন্নত এলাকা

যেখানে আংশিক অবকাঠামোর বিকাশ ঘটেছে এবং সামান্য কিছু শিল্পায়ন রয়েছে৷

অনুন্নত এলাকা

যেখানে আংশিক অবকাঠামোর বিকাশ মোটেও সাধিত হয় নি এবং শিল্পায়নের কোন ছোঁয়া লাগে নি৷

রাজস্ব সুবিধা

সরকারের বর্তমান শিল্পনীতিতে নিম্নোক্ত রাজস্ব সুবিধাদি প্রদান করা হয়েছেঃ
  • কর অবকাশ
  • বর্ধিত হারে অপচয় ধার্যের সুযোগ 
  • বিনিয়োগ ভাতা
  • লোকসান মুনাফার সাথে সমন্বয়সাধন
  • মূলধনি মুনাফা করমুক্ত
  • দ্বৈত কর রেয়াত

কর অবকাশ

সরকার উন্নত স্বল্পোন্নত এবং অনুন্নত এলাকায় শিল্প স্থাপনের ক্ষেত্রে যথাক্রমে পাঁচ বছর সাত বছর ও নয় বছরের কর অবকাশের সুবিধা প্রদান করেছেন৷ এ কর অবকাশের মেয়াদ শিল্পে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরুর মাস থেকে হিসেবে করা হবে৷

এছাড়া শিল্পনীতিতে মৎস্যচাষ হাঁস মরগির খামার প্রতিষ্ঠা গরাদি পশু পালন দুগ্ধ উৎপাদন উদ্যান উন্নয়ন ও নার্সারি প্রভৃতি শিল্পে এলাকা নির্বিশেষে দশ বছরের কর অবকাশ দেয়া হয়েছে৷

বর্ধিত হারে অবচয় ধার্যের সুযোগ

উন্নত শিল্প এলাকার নতুন মেশিনারি বা প্ল্যান্টের বেলায় প্রথম বছরে শতকরা ৮০ ভাগ এবং পরবর্তী বছরে শতকরা ২০ ভাগ অবচয় ধার্য করার সুবিধা প্রদত্ত হয়েছে৷ তবে স্বল্পোন্নত এলাকায় স্থাপিত শিল্পের ক্ষেত্রে এই অবচয়ের হার প্রথম বছরে শতকরা ১০০ ভাগ হতে পারে৷

বিনিয়োগ ভাতা

নীতি অনুযায়ী কোন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মেশিনারি ও প্ল্যান্টের প্রকৃত মূল্যের শতকরা ২০ ভাগ বিনিয়োগ ভাতা দেয়া হবে৷ অনুন্নত এলাকায় স্থাপিত শিল্পের ক্ষেত্রে এ বিনিয়োগ ভাতার হার শতকরা ২৫ ভাগ করা হয়েছে৷

লোকসান মুনাফার সাথে সমন্বয়সাধন

কোন শিল্পপ্রতিষ্ঠানে যদি লোকসান দেখা দেয় তবে এক বছরের লোকসান পরবর্তী বছরে স্থানান্তর বা অন্য বছরের মুনাফার সাথে সমন্বয় করা যাবে না৷

মুলধনি মুনাফা করমুক্ত

দালানকোঠা মেশিনারি ও প্যান্ট বিক্রয় থেকে অর্জিত মূলধনি মুনাফা ২ বছরের মধ্যে সম্পত্তিতে বিনিয়োগ করা হলে অথবা নতুন কোন কোম্পানি শেয়ার ক্রয় করা হলে অথবা প্রতিষ্ঠানকে কোম্পানিতে রূপান্তরিত করা হলে ঐ মুনাফা করমুক্ত হবে৷

দ্বৈত কর রেয়াত

বেদেশিক বিনিয়োগের ক্ষেত্রে দ্বিপক্ষীয় চুক্তির ভিত্তিতে দ্বৈত কর রেয়াতের ব্যবস্থা  সরকারের ঘোষিত শিল্পনীতিতে রয়েছে৷
এতদ্ব্যতীত একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা পর্যন্ত লভ্যাংশ আয় রয়্যালটি ও প্রযুক্তি ফি কোন কোন ক্ষেত্রে বৈদেশিক ঋণের সুদ এবং আনুঙ্গিক কিছু কিছু ব্যয় কনমুক্ত রাখা হয়েছে৷

শিল্পের অর্থসংস্থানগত সুবিধা?

দ্রুত শিল্পায়নের লক্ষ্যকে বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান একান্ত অপরিহার্য৷ শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার জন্য স্থানীয় মুদ্রার পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রার তহবিল প্রয়োজন হয়৷ আমাদের দেশে বৈদেশিক মুদ্রা পুঁজির অভাবে স্থানীয় মূলধনকেও সুষ্টু ও কার্যকরভাবে শিল্পায়ন কাজে ব্যবহার করা যায় না৷ কারণ শিল্পকারখানা স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ যন্ত্রপাতি ও কলকব্জা প্রযুক্তি প্রভৃতি বৈদেশিক মুদ্রার সংগ্রহ করতে হয়৷ 

সেজন্য সরকার দেশীয় উদ্যোক্তাদের শিল্পায়নে আকৃষ্ট করার জন্য প্রতিষ্ঠানগত ব্যবস্থা ও বিভিন্ন ঋন কর্মসূচির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রার পুঁজি সরবরাহের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন৷ এ ছাড়াও সরকার স্থানীয় মুদ্রার নতুন শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করা প্রতিষ্ঠিত শিল্পের কার্যক্রম চালু রাখা ইত্যাদি বিভিন্ন উদ্দেশ্য বিভিন্ন উদ্যোগমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করছে৷

শিল্পনীতির কৌশল?

শিল্পনীতে একটি দেশের শিল্পায়ন প্রক্রিয়াকে অব্যাহত ও দ্রুততর করার জন্য দিক নির্দেশনা দিয়ে থাকে৷ শিল্পায়নের লক্ষ্যে পরিকল্পনা প্রণয়ন পরিকল্পনামাফিক প্রস্তুতি গ্রহণ ও সফল বাস্তবায়নের জন্য শিল্পনীতি বিশেষভাবে কার্যকর৷ সফল বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কোন ক্রটিবিচ্যুতি দেখা দিলে ক্রটিবিচ্যিুতিটি কোথায় তা যাচাই করার জন্য মূল্যায়ন করার প্রয়োজন হয়৷ সেই মোতাবেক সংসশোধনীয় ব্যবস্থা নেয়ার দরকার হয়৷ নিচে শিল্পনীতির কৌশলের প্রথম পদক্ষেপ রেখাচিত্রের সাহায্যে দেখানো হলঃ
শিল্পনীতির কৌশল বলতে কীভাবে বা কোন কোন কৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে দেশে শিল্প স্থাপনে কাজের  অগ্রগতি অর্জিত হয় তা বোঝায়৷ শিল্পনীতির উদ্দেশ্যসমূহ অর্জনের জন্য নিম্নোক্ত কৌশলসমূহ গ্রহণ করা হয়েছেঃ
  • গুণগত মানের ভিত্তিতে বর্তমান শিল্পসমূহের সামঞ্জস্য বিধান আধুনিকরণ পূনর্বাসন এবং প্রতিস্থাপনের ব্যবস্থাপসমূহ বর্তমান ক্ষমতার সর্বোচ্চ ব্যবহারে উৎসাহ প্রদান করা।
  • উপযুক্ত উৎসাহ প্রদানের মাধ্যমে মধ্যবর্তী এবং মৌলিক পর্যায়ে উৎপাদন শিল্পে বিনিয়োগে উৎসাহিত করা।
  • উপযুক্ত রপ্তানি উন্নয়ন ব্যবস্থার মাধ্যমে বিশেষ করে অপ্রচলিত পণ্যসামগ্রী এবং বৈদেশিক মুদ্রায় আন্তর্জাতিক টেন্ডারে অংশগ্রহণকারী ফার্মের জন্য রপ্তানি ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
  • অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত শিল্পসমূহের ব্যাপারে অব্যাহত পর্যালোচনা করে পর্যায়ক্রমে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
  • বর্ধিত পরিচালনাগত স্বাধীনতা প্রদান লক্ষ্যমাত্রী ধার্যকরণ এবং কাজের তত্ত্বাবধান ও মূল্যায়নের মাধ্যমে সরকারি খাতের শিল্পসমূহের দক্ষতা বৃদ্ধি।
  • কিছু উৎসাহ দান ব্যবস্থার মাধ্যমে ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প খাতের উন্নয়ন সাধন করা।
  • অন্বয়ী শিল্প এবং উপ ঠিকদারি বিকাশে উৎসাহ প্রদান।
  • দেশের সকল অঞ্চলে দ্রুত শিল্প বিস্তারে অবকাঠামোগত সুযোগ সুবিধা প্রদান করা।
  • বিশেষ উৎসাহ দান এবং গবেষণা উৎপাদন ক্ষমতা ও বিপণনের ওপর গুরুত্বপূর্ণ আরোপের মাধ্যমে তাঁতশিল্প এবং রেশম খাতসমূহকে শক্তিশালী করা।
  • গবেষণা ও উন্নয়নকে (R & D) উৎসাহিত করা এবং যথাযথ প্রযুক্তি গ্রহণ ও হস্তান্তর ব্যবস্থার উন্নয়ন সাধন করা।
  • অপরিহার্যভাবে কৃষি উন্নয়ন নীতির সঙ্গে শিল্প উন্নয়ন নীতির সংযোগ সাধন করা৷

সরকারি ও বেসরকারি খাত

বাংলাদেশ সরকার ২০০৭ ইং সালে প্রণীত শিল্পনীতিতে শিল্প বিনিয়োগ সরকারি ও বেসরকারি খাতের ভূমিকা সুষ্ঠুভাবে উল্লেখ করে৷ নিম্নলিখিত ক্ষেত্রেসমূহ সরকারি খাতের জন্য সংরক্ষিতঃ
  • অস্ত্র গোলাবারুদ এবং সংবেদনশীল প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি
  • টেলিযোগাযোগ (বিতরণ ও সেবা ব্যতীত)
  • পারমাণবিক শক্তি এবং
  • সিকিউরিটি মুদ্রণ (কাগজি মুদ্রা) এবং টাকশাল৷
  • সংরক্ষিত বনাঞ্চল এলাকায় বনায়ন এবং যান্ত্রিক নিষ্কাশন
  • বিমান পরিবহন (কার্গো ব্যতীত) এবং রেলওয়ে
Textile BD

Founder and Editor of Textile BD. He is a Textile Blogger & Entrepreneur. He is working as a textile job in Bangladeshi companies.

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন