কপিরাইট কি | কপিরাইট আইন বাংলাদেশ

কপিরাইট একটি গুরুত্বপূর্ণ বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ যা রক্ষা করার ব্যবস্থা না করলে এর স্বত্বাধিকারী বা মালিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কপিরাইট এর মাধ্যমে সাহিত্য, শিল্প কর্ম ও অন্যান্য শিল্পকলা সৃষ্টিকারীকে তার সৃষ্ট মেধাসম্পদ ব্যবহারের একচ্ছত্র অধিকার প্রদান করা হয়। 

গল্প, নাটক, প্রবন্ধ, কবিতা, জাতীয় সাহিত্যকর্ম, চিত্রকর্ম, চলচ্চিত্র, সংগীত, যন্ত্র সঙ্গীত, ভাস্কর্য, স্থাপত্যকলা কপিরাইট দ্বারা সংরক্ষিত হয়। বর্তমানে কম্পিউটার সফটওয়্যার ওকপিরাইট দ্বারা সংরক্ষিত হয়। 
কপিরাইট
কপিরাইট

উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যখন কোন পুস্তকের লেখক এবং প্রকাশকের মধ্যে বইটি মুদ্রণ ও বাজারজাতকরণের জন্য নির্দিষ্ট সময়ে চুক্তি হয় একে কপিরাইট চুক্তি বলা হয়। চুক্তিপত্রে সময়, রয়েলটির পরিমাণ প্রকৃতি উল্লেখ থাকে। 

তাছাড়া চুক্তিপত্র রেজিষ্ট্রি করা থাকলে চুক্তি ভঙ্গের জন্য লেখক কোর্টে প্রতিকার চাইতে পারে। ব্র্যান্ডের পণ্য, খেলা, তারকাদের নাম প্রভৃতি কপিল চুক্তির মাধ্যমে বিপণন করা যায়। প্রকৃতপক্ষে কপিরাইট চুক্তি পণ্য বাজারজাতকরণের একটি জনপ্রিয় উপায়। 

 কপিরাইট কাকে বলে?

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সৃজনশীল সৃষ্টিকর্মের কপি কিংবা পুনরুৎপাদনের অবৈধ ব্যবহার বন্ধ করা জন্য আইনের যে বিধান রাখা হয় তাকে কপিরাইট আইন বা সংক্ষেপে কপিরাইট বলে।

কপিরাইট আইন কি?

কপিরাইট হল একটি ইংরেজী শব্দ। কপিরাইট শব্দের বাংলা প্রতিশব্দ হল গ্রন্থস্বত্ব বা লেখস্বত্ব। একজন লেখকের রচিত পুস্তক বা গ্রন্থের ওপর তার মুদ্রণ, পুনঃমুদ্রণ ও প্রকাশের অধিকারকেই কপিরাইট বলা হয়। কপিরাইট আইন হল একটি একচেটিয়া, বৈধ ও নিশ্চিত অধিকার। 

যা একজনের বুদ্ধিবৃত্তিক বা মস্তিস্কজাত সৃষ্টিকে নকল কিংবা পাইরেসি বা অন্যায়ভাবে অনুসরণ হতে অন্য কাউকে বিরত রাখে। তাছাড়া কপিরাইটের মাধ্যমে সাহিত্য, শিল্পকর্ম ও অন্যান্য শিল্পকলা সৃষ্টিকারীকে তার সৃষ্ট মেধাসম্পদ ব্যবহারের একচ্ছত্র অধিকার প্রদান করে থাকে। 

গল্প, নাটক, প্রবন্ধ, কবিতা, চিত্রকর্ম, চলচ্চিত্র, সঙ্গীত, ভাস্কর্য, স্থাপত্যকলা, জাতীয় সাহিত্যকর্ম ইত্যাদি কপিরাইট দ্বারা সংরক্ষিত হয়ে থাকে। কম্পিউটার সফটওয়্যারও কপিরাইট দ্বারা সংরক্ষিত হয়ে থাকে। 

কপিরাইট আইনের কারণেই কোন নির্মাতা, শিল্পী, প্রােগ্রামার বা লেখক তাদের মেধার সঠিক মূল্যায়ন পেয়ে থাকেন। আর তাই কপিরাইট আইনের কার্যকারিতা সৃজনশীল কর্মীদের নিরুৎসাহিত হওয়া থেকে রক্ষা করে থাকে।

কপিরাইট আইন কেন প্রয়ােজন?

কপিরাইট আইন কোন সৃজনশীল কাজের ব্যক্তিকে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তার সৃষ্টকর্মের ওপর মালিকানা কিংবা স্বত্বাধিকার দিয়ে থাকে। যার ফলে কোন সৃষ্টকর্মের বাণিজ্যিক মূল্য থাকলে সেটি যে তৈরি করে সে পেয়ে থাকে। তবে অন্য কেউ পায় না। 

যেহেতু প্রত্যেক মানুষের বেঁচে থাকার জন্য টাকার প্রয়ােজন তাই কবি, সাহিত্যিক, সফটওয়্যার নির্মাতা, চলচ্চিত্র নির্মাতা, ওয়েবসাইট ডিজাইনকারী সবারই অর্থের প্রয়ােজন। তারা তাদের সৃজনশীল কাজ সৃষ্টির জন্য পরিশ্রম, মেধা এবং কখনাে কখনাে টাকা খরচ করে থাকেন। 

কাজেই সৃষ্টকর্ম বিক্রি বা বিনিময়ের মাধ্যমে তাঁকে তার বিনিয়ােগের সুফল তুলতে দেওয়া উচিত বলে মনে করেন অনেকেই। তাই কপিরাইট আইনের আওতায় পাওয়া আইনগত অধিকার তাদের সেই সুবিধাই দিয়ে থাকে। 

যদি কোন শিল্পী বা প্রােগ্রামার দেখতে পান যে তার দীর্ঘদিনের শ্রম ও মেধার ফসল অন্যরা কোন ধরনের স্বীকৃতি কিংবা বিনিময় মূল্য ছাড়া উপভােগ বা ব্যবহার করছে। তাহলে তিনি নিরুৎসাহিত হয়ে পড়েন। 

আর তাই কপিরাইট আইনের কার্যকারিতা সৃজনশীল কর্মীদের এই নিরুৎসাহিত হওয়া থেকে রক্ষা করে।

কপিরাইট রেজিস্ট্রেশনের আওতাভুক্ত বিষয়গুলো কি কি?

সাহিত্য, কম্পিউটার সফটওয়্যার, গবেষণা তত্ত্ব, অ্যানিমেশন, স্থাপত্য নকশা, চার্ট, ফটোগ্রাফ, স্কেচ, ভাস্কর্য, সংগীত, রেকর্ড কর্ম, চলচ্চিত্র, নাটক, পেইন্টিংসহ বিভিন্ন ধরনের শিল্পকর্ম এবং লোক-সাংস্কৃতিক অভিব্যক্তি ইত্যাদি কপিরাইট রেজিস্ট্রেশনের আওতাভুক্ত বিষয়। 

উল্লেখিত বিষয়সমূহের প্রণেতা হিসেবে মৌলিক কর্মের কপিরাইট রেজিস্ট্রেশন ও সম্পাদনকারী হিসেবে আনুষঙ্গিক অধিকার সুরক্ষায় রিলেটেড রাইট রেজিস্ট্রেশন করা যায়। 

কপিরাইটের মেয়াদ?

কপিরাইটেরও নির্দিষ্ট মেয়াদ আছে। যেমন সাহিত্য কর্মের জন্য কবি কিংবা লেখকের মৃত্যুর পর থেকে ৬০ বছর পর্যন্ত কপিরাইট বিবেচনাধীন থাকে। তেমনিভাবে চলচ্চিত্র কিংবা আলোকচিত্র প্রকাশিত হওয়ার পরবর্তী বছর থেকে ৬০ বছর পর্যন্ত কপিরাইট বিবেচনাধীন থাকবে। 

আর তাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কপিরাইটের মেয়াদ ৬০ বছর হয়। তবে কখন থেকে সেই মেয়াদ শুরু হবে তা বিভিন্ন ক্ষেত্র ভেদে ভিন্ন হতে পারে।

বাংলাদেশের কপিরাইট আইন?

উপমহাদেশে ১৯১২ সালে প্রথম কপিরাইট আইন প্রণীত। আর ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশে কপিরাইট আইন প্রথম তৈরি হয়। কিন্তু এরপর থেকে বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তিতে অনেক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। আর তাই মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট, সিডি ইত্যাদির কারণে সৃষ্টিশীলতা ও কপিরাইট ধারণারও বদলে গিয়েছে। 

পরবর্তীতে ২০০০ সালে নতুন একটি কপিরাইট আইন করা হয়। যা সর্বশেষ ২০০৫ সালের দিকে সংশোধন হয়। মোটকথা মেধাসম্পদ সংরক্ষণের উপায়গুলো যথাযথভাবে ব্যবহার করলে মুল মালিকরা অনেকাংশে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া হাত থেকে রক্ষা পাবে। 

কপিরাইট আইন ২০০৫ অনুযায়ী লেখক বা শিল্পীর জীবনকাল ও মৃত্যুর পর ৬০ বছর পর্যন্ত কপিরাইট সংরক্ষিত থাকে। তবে বাংলাদেশে কপিরাইট আইন লঙ্ঘনে শাস্তি হচ্ছে চলচ্চিত্র বাদে চারটি ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ চার বছরের জেল ও দুই লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান আছে। 

চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে শাস্তির পরিমাণ সর্বচ্চ পাঁচ বছরের জেল। তবে এই আইনের প্রতিকার পেতে হলে মেধাসম্পদটির অবশ্যই রেজিস্ট্রেশন থাকতে হবে।

প্রণেতা কে?

  • সাহিত্য বা নাট্যকর্মের গ্রন্থাকার কিংবা রচয়িতা
  • কম্পিউটারের মাধ্যমে সৃজনকারীর কর্মের ক্ষেত্রে কর্মটির সৃজনকারী ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠান
  • সংগীত কর্মের ক্ষেত্রে হবে সুরকার ও গীতিকার
  • শিল্পকর্মের ক্ষেত্রে হবে সৃজনকারী
  • চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে হবে প্রযোজক
  • ফটোগ্রাফের ক্ষেত্রে হবে চিত্রগ্রাহক

কখন কপিরাইট বা রিলেটেড রাইট লঙ্ঘিত হয়?

কপিরাইট কিংবা রিলেটেড রাইটের বৈধ মালিক অথবা প্রণেতার অনুমতি বা লাইসেন্স ছাড়া কিংবা রেজিস্ট্রার অব কপিরাইটের ইস্যুকৃত লাইসেন্স ব্যতীত বা লাইসেন্সের শর্ত ভঙ্গ করে, এমন কোন ধরনের কাজ কপিরাইট লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচিত হবে।

কপিরাইট লঙ্ঘন হলে প্রতিকার?

কপিরাইট লঙ্ঘন অপরাধের মামলা দেওয়ানি কিংবা ফৌজদারি আদালতে দায়ের করা হয়।
Textile BD

Founder and Editor of Textile BD. He is a Textile Blogger & Entrepreneur. He is working as a textile job in Bangladeshi companies.

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন